পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন সম্পর্কে জানেন কী? আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা পল্লী মঙ্গল এনজিও সম্পর্কে জানেন না। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৩০ টি শাখার মাধ্যমে এনজিওটি গ্রাহকদের ঋণ প্রদান করছে। পল্লী মঙ্গল এনজিও-টি PMK নামেও পরিচিত। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে”পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন “ সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি পল্লী মঙ্গল এনজিও সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো। সেহেতু আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ গ্রামে বসবাস করে থাকেন। আর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আর্থিক সহায়তার জন্য পল্লী মঙ্গল এনজিও-টি কাজ করে চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরা প্রায়ই ব্যাংক বা এনজিও থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার সম্মুখীন হন। তবে পল্লী মঙ্গল এনজিও গ্রাহকদের সহজ শর্তে দ্রুত সময়ে লোন প্রদান করে থাকে।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন কী?
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন হলো এমন এক ধরনের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা, যা পল্লী মঙ্গল কর্মসূচী (PMK) নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদান করে থাকে। পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন প্রদানের উদ্দেশ্য হলো: দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সচ্ছলতা ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি করা । এনজিওটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও পল্লী মঙ্গল এনজিও-টি ঢাকার আশুলিয়ার জিরাবোতে তাদের প্রধান কার্যালয় থেকে সারাদেশে তাদের সকল শাখায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন বিশেষ করে কৃষক,ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোনের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের যে সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ এনজিও ঋণ প্রদান করছে , তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। এক্ষেত্রে পল্লী মঙ্গল এনজিও এর ব্যতিক্রম নয়। পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে। যেমন:
- ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে এটি বিশেষ করে ছোট ব্যবসা শুরু বা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য।
- কৃষি ঋণ প্রদান করে থাকে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা ও কৃষি কাজের যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য লোন নেওয়া যায়।
- ব্যবসায়িক লোন সুবিধা রয়েছে। এটি বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সাহায্যের অন্যতম একটি মাধ্যম।
- বাংলাদেশের অন্যান্য এনজি-এর থেকে তুলনামূলকভাবে সুদের হার কম সাধারণত সুদের হার ১০% থেকে ১৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- সাধারণত গ্রাহকেরা পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে লোন গ্রহণ করে নূন্যতম ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে সঞ্চয় স্কিম এর মাধ্যমে অর্থাৎ ডিপিএস এর মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করা যায় যা গ্রাহকের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
বিশেষ করে পল্লী মঙ্গল এনজিও-টি গ্রাহকদের সাথে তাদের শর্তাবলী অনুযায়ী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। গ্রাহকের যেকোনো সমস্যায় সঙ্গে পল্লী মঙ্গল এনজিও সর্বদা রয়েছে তাদের পাশে।
পল্লীমঙ্গল এনজিও থেকে কত টাকা লোন নেওয়া যায়
পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে সাধারণত নূন্যতম ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করে চাহিদা অনুযায়ী লোন সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লোন সুবিধা পাওয়ার জন্য তার অবশ্যই বেশ কিছু যোগ্যতা থাকা আবশ্যক।
পল্লীমঙ্গল এনজিও থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশের অন্যান্য এনজিও-এর মত পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন প্রদান করে থাকে গ্রাহকদের। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের লোন গ্রহন করার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা থাকা অত্যন্ত আবশ্যক সকল যোগ্যতার মধ্যে রয়েছে:
- গ্রাহককে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- গ্রাহককে অবশ্যই কর্মমুখী হতে হবে।
- গ্রাহক কোন কাজের জন্য বা কিসের জন্য লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন তার প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে।
- গ্রাহক আর চাকরি করছেন না ব্যবসা করছেন না অন্য কোন কর্মে নিযুক্ত রয়েছেন তার প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
- অবশ্যই বাংলাদেশের নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ১৮ বছরের ও সর্বোচ্চ ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার তবে জেনে নেওয়া যাক পল্লী মঙ্গলএনজিও থেকে লোন পেতে হলে কি কি নথিপত্র প্রয়োজন হয়।
পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও শর্তাবলী
পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টস বা নথিপত্র প্রয়োজন হয়। এ সকল নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- অবশ্যই আবেদনকারীর লোনের গ্যারেন্টার বা নমিনি প্রয়োজন হবে এক্ষেত্রে নমিনিট জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবি প্রয়োজন হবে।
- আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র।
- স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র প্রদান করতে হবে।
এ সকল ডকুমেন্ট ছাড়াও আরো বেশ কিছু ডকুমেন্ট বা নথিপত্র প্রয়োজন হতে পারে এটি আপনাকে পল্লী মঙ্গল এনজিও এর দায়িত্ব ও কর্মকর্তারা আপনাকে এ বিষয়ে জানাবেন। এছাড়া পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন পাওয়ার জন্য বেশ কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন:
- আবেদনকারীকে গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা হতে হবে এবং বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র, ২ কপি ছবি, এবং স্থানীয় ঠিকানার প্রমাণ।
- কিস্তি পরিশোধে নিয়মিত থাকতে হয়, এবং দেরি হলে জরিমানা হতে পারে।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন আবেদন পদ্ধতি
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন আবেদন পদ্ধতির সহজ অন্যান্য এন জিওরনের তুলনায় এক্ষেত্রে আপনাকে যে সকল অনুসরণ করতে হবে তা নিম্ন উপস্থাপন করা হয়েছে:
- আপনার নিকটস্থ পল্লী মঙ্গল এনজিওর যেকোনো শাখায় যোগাযোগ করুন।
- আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন এবং এটি পূর্ণ করে জমা দিন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ।
- আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও ফরম জমা দেওয়ার পর আপনার আবেদন এর লোনটি এনজিওর দায়িত্বও তো একজন কর্মকর্তা পর্যালোচনা করবেন। আর লোনটি পাওয়ার যোগ্যতা আপনি অর্জন করলে সাধারণত ৭ কর্ম দিবস থেকে ১৪ তম কর্ম দিবসের মধ্যে লোন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোনের সুবিধা ও অসুবিধা
প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে যার কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সুনাম অর্জন করে তেমনি সমালোচনার পাত্র হন । নিম্নে পল্লীমঙ্গল এনজিও লোনের সুবিধা ও অসুবিধা উপস্থাপন করা হয়েছে:
সুবিধা
- গ্রামীণ এলাকায় খুব সহজে পাওয়া যায়।
- লোন গ্রহনের জন্য কম কাগজপত্রের প্রয়োজন।
- প্রশিক্ষণ ও সঞ্চয়ের সুযোগ রয়েছে।
অসুবিধা:
- আশা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার মূলত পরিবর্তিত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে লোন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে নিবেন আপনার লোনের সুদের হার কত। সাধারণত সুদের হার ব্যাংকের তুলনায় কমবেশি হতে পারে।
- কিস্তি পরিশোধে কঠোর নিয়ম নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোনের প্রভাব
বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ জুড়ে আছে কৃষি উৎপাদন নিয়ে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা এবং নারীর ক্ষমতায়নবিদের জন্য পল্লীমঙ্গল এনজয়টি কাজ করে যাচ্ছে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী জানা যায় যে পড়লি মঙ্গল ২০২৩ সালে ৫০ হাজার গ্রাহকের বেশি গ্রাহককে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। গ্রামীণ পর্যায়ে দারিদ্র্য হ্রাসে ও পারিবারিক সচ্ছলতা বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে যা আমাদের আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন অনলাইনে
পল্লী মঙ্গল এনজিও থেকে লোন নিতে হলে শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন থেকে লোন নেওয়ার তেমন কোন উপায় নেই। তবে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে আগামীতে এই সুবিধাটি চালু হলেও হতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
গ্রাহকদের পল্লী মঙ্গল এনজিও লোন কত টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়?
সাধারণত ন্যূনতম ৫০০০ টাকা থেকে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে প্রকল্প ভেদে এটি পরিবর্তিত হয়।
পল্লী মঙ্গল এনজিও লোনের সুদের হার কত?
সাধারণত পল্লীমঙ্গল এনজিও এর লোনের সুদের হার ১০-১৫% বার্ষিক হয়ে থাকে।
কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে কী হয়?
জরিমানা আরোপ হতে পারে, তবে কর্মীরা আলোচনার সুযোগ দেন।
কারা আবেদন করতে পারে?
গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা, বিশেষ করে নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
শেষ কথা
পল্লীমঙ্গল এনজিও লোন গ্রামীণ পর্যায়ে মানুষের আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং তাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য এক অন্যতম শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পল্লীমঙ্গল এনজিও টি এ কেবলমাত্র গ্রামীন পাওয়া যায় মানুষের সহায়তা করার জন্য নয় বরং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথের তারা সাথী হতে চায়। প্রত্যাশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে পল্লীমঙ্গল এনজিও লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছি। আপনি যদি পল্লীমঙ্গল এনজিও থেকে লোন নিতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ পল্লীমঙ্গল এনজিওর যেকোনো শাখায় যোগাযোগ করুন।
আরও জানতে পারেনঃ উদ্দীপন এনজিও লোন ২০২৫