সময়ের সাথে সাথে ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখন কেবলমাএ ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে না বরং এখন থেকে খুব সহজে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে খুব সহজে লোন পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে বিকাশ গ্রাহকদের সিটি ব্যাংককের মাধ্যমে লোন প্রদান করে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “মোবাইল ব্যাংকিং লোন” সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য জানাবো। সেহেতু আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মোবাইল ব্যাংকিং লোন কি
মোবাইল ব্যাংকিং লোন হলো এমন একটি কোন এই লোনটি পেতে অতিরিক্ত কোন ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়না বরং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে লোন পাওয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের সেবার মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে লোন গ্রহণ করার পদ্ধতিকে মোবাইল ব্যাংকিং লোন বলে। বর্তমানে বিকাশ সিটি ব্যাংকের মাধ্যামে মোবাইল ব্যাংকিং লোন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজ এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন পাওয়ার উপায়
বর্তমান সময়ে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রাহকদের লোন প্রদান করে থাকে। তবে আমাদের মধ্যেই অনেকেই রয়েছেন যারা বিকাশ থেকে লোন পেয়ে থাকেন না। যারা এখন পর্যন্ত বিকাশ থেকে লোন পাননি তারা নিন্মলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন ও মেনে চলতে পারেন।
- নিয়মিত বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন।
- আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন।
- আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য হালনাগাদ করুন।
- বিকাশ অ্যাকাউন্টে নমিনির তথ্য সংযোজন করুন।
- সেভিংস করুন।
- পেমেন্ট করুন।
- অ্যাডমানি করুন ব্যাংক থেকে নিয়মিত।
এসকল নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি কয়েক মাসের মধ্যে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লোনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন কত টাকা পাওয়া যায়
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি নূন্যতম ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা লোন পাওয়া যায়।পূর্বে মাএ ২০,০০০ টাকা লোন পাওয়া গেলেও বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা লোন পাওয়া যায়। গ্রাহক তার বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লোনের অর্থ উৎলোন ও জমা করতে পারবেন। একজন গ্রাহক তার লোন লিমিটের মধ্যে একাধিক লোন নিতে পারবেন। উদাহরণ:
কোন গ্রাহকের লোন লিমিট যদি ২০০০ টাকা হয় তাহলে উক্ত গ্রাহক নূন্যতম ৫০০ টাকা লোন ৪ বারে সর্বমোট ২০০০ টাকা লোন নিতে পারবেন।
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন পাওয়ার যোগ্যতা
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং থেকে লোন পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। এই যোগ্যতাগুলো হলো:
- গ্রাহককে নিয়মিত তার বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। যেমন: পেমেন্ট, ট্রান্সফার, বা বিল পরিশোধ।
- অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ রাখতে হবে, যা আপনার অ্যাকাউন্টের সক্রিয়তা প্রমাণ করে।
- বিকাশ অ্যাকাউন্টের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, ঠিকানা, এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য হালনাগাদ রাখতে হবে।
- অ্যাকাউন্টে নমিনির তথ্য সংযোজন করা থাকতে হবে।
- নিয়মিত সেভিংস করা এবং পেমেন্টের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখা।
- ব্যাংক থেকে নিয়মিত অ্যাডমানি করলে লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
এই শর্তগুলো পূরণ করলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনি বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোনের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
কেন বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে লোন নেবেন?
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুবিধাগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- আবেদনের সাথে সাথেই লোন পাওয়া যায়।
- ১ মাস বা ৩ মাস মেয়াদী লোন নেওয়ার সুযোগ। তবে পে লেটার ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস লোন পরিশোধ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
- কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা জামানতের প্রয়োজন নেই।
- কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হয় না।
- বিকাশ অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধ হয়ে থাকে এ জন্য বাড়তি কোম জামাললা নেই।
- কম প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হয়। লোনের উপর মাত্র ০.৫৭৫% প্রসেসিং ফি (০.৫% + ভ্যাট)।
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন সুবিধার বিস্তারিত
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে ৫০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়। এই লোন সরাসরি গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং গ্রাহক এটি উত্তোলন করতে পারেন। গ্রাহক তার লোন লিমিটের মধ্যে একাধিক লোন নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি লোন লিমিট ২০,০০০ টাকা হয়, তবে গ্রাহক ৫০০ টাকার একাধিক লোন নিয়ে মোট ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেন। গ্রাহকভেদে সুদের হার ভিন্ন হতে পারে।
লোন পরিশোধের নিয়মাবলি
লোন পরিশোধের প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং নমনীয়। নিয়মাবলি হলো:
- লোন আবেদনের সময় এবং লোন পাওয়ার পর বিকাশ অ্যাপের ড্যাশবোর্ডে কিস্তির পরিমাণ ও পরিশোধের তারিখ দেখা যাবে।
- নির্দিষ্ট তারিখে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তির অর্থ কেটে নেওয়া হবে। সেহেতু আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ রাখুন।
- গ্রাহক চাইলে নির্দিষ্ট তারিখের আগে লোন পরিশোধ করতে পারেন, যা সুদের খরচ কমাতে সাহায্য করে।
- নির্দিষ্ট তারিখে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকলে বা আগাম পরিশোধ না করলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে। বিলম্ব ফি’র হার লোনের পরিমাণের উপর বাৎসরিক ১.৫%।
কারা এই লোন সুবিধা পাবেন
সিটি ব্যাংকের ঋণ প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট বিকাশ গ্রাহকরা এই লোন সুবিধা পাবেন। আপনি যোগ্য কিনা তা জানতে বিকাশ অ্যাপের “লোন” অপশনে গিয়ে চেক করতে পারেন। লোনের সুদের হার, প্রসেসিং ফি, লিমিট, পরিশোধের নিয়ম এবং ক্রেডিট পলিসি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি ব্যাংক নির্ধারণ করে।
পে-লেটার কি ও সুবিধা
বিকাশ এবং সিটি ব্যাংক যৌথভাবে “পে-লেটার” নামে একটি নতুন পেমেন্ট সুবিধা চালু করেছে। এটি বিকাশ গ্রাহকদের জন্য ক্যাশলেস পেমেন্টের নতুন দিগন্ত। পে-লেটারের মাধ্যমে দেশজুড়ে ৬ লাখের বেশি বিকাশ মার্চেন্ট আউটলেটে পেমেন্ট করা যায়। এর মূল সুবিধাগুলো হলো:
- ৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ করলে কোনো সুদ দিতে হয় না। প্রসেসিং ফি মাত্র ০.৫৭৫%।
- ৬ মাসের মাসিক কিস্তিতে পেমেন্ট পরিশোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে পেমেন্টের সময় মোট পরিমাণের ২০% বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়। গ্রাহকভেদে সুদের হার ভিন্ন হতে পারে।
পে-লেটার ব্যবহারের পদ্ধতি
পে লেটার বয়বহারে গ্রাহককে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। ধাপ সমূহ নিম্নরূপ:
- বিকাশ অ্যাপে “পেমেন্ট” অপশন সিলেক্ট করুন।
- মার্চেন্টের QR কোড স্ক্যান করুন।
- ৭ দিনে ইন্টারেস্ট ফ্রি পরিশোধ বা ৬ মাসের কিস্তি আপনার পছন্দের প্ল্যান বেছে নিন।
- পরিশোধের বিস্তারিত দেখুন এবং বিকাশ পিন দিন।
- ট্যাপ করে ধরে রাখুন, পেমেন্ট সম্পন্ন হবে।
- পরিশোধের জন্য অ্যাপের “লোন” অপশনে গিয়ে লোনের বিবরণী সিলেক্ট করুন।
গ্রাহকদের বেশ কিছু অসুবিধা
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন সুবিধা সত্ত্বেও কিছু অসুবিধা রয়েছে:
- সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা লোন পাওয়া যায়, যা বড় প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
- সবাই লোন পান না; সিটি ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট গ্রাহকরা যোগ্য হন।
- নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধ না করলে ১.৫% বাৎসরিক বিলম্ব ফি প্রযোজ্য।
- গ্রাহকভেদে সুদের হার ভিন্ন হতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে।
- ৬ মাসের কিস্তিতে পেমেন্টের ক্ষেত্রে ২০% আগাম কাটা যায়, যা সবার জন্য সুবিধাজনক নাও হতে পারে।
লোন নেওয়ার পূর্বে করণীয়
লোন নেওয়ার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
- লোন নেওয়ার প্রকৃত প্রয়োজন আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- আপনার আয় এবং ব্যয় বিবেচনা করে নিশ্চিত করুন যে আপনি কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। নিয়মিত লেনদেন এবং পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন।
- লোনের সুদের হার, প্রসেসিং ফি, এবং পরিশোধের শর্তাবলি ভালোভাবে বুঝে নিন।
- সর্বশেষ সংস্করণের বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করুন এবং লোন অপশন চেক করুন।
- প্রয়োজনে আর্থিক ক্ষেত্রে বিবেচনা করার জন্য আপনার পরিবারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

আরও জানতে পারেনঃ অনলাইনে ১০ হাজার টাকা লোন (সঠিক নিয়ম)
শেষ কথা
বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন এবং পে-লেটার সুবিধা আপনার জরুরি আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহজ এবং দ্রুত সমাধান দিতে পারে। তবে, লোন নেওয়ার আগে সব শর্ত ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং পরিশোধের পরিকল্পনা করে এগোনো উচিত। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা দ্রুত আপনার প্রশ্নের উত্তর জানাবো।