৫ ইসলামি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠন করছে বৃহত্তম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক

বাংলাদেশের আর্থিক খাত স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বড় সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দেশের পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হচ্ছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামি ব্যাংক। নতুন ব্যাংকটি একদিকে যেমন আর্থিক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনবে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৫ ইসলামি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠন করছে বৃহত্তম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক
৫ ইসলামি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠন করছে বৃহত্তম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক

একীভূতকরণের পেছনের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দীর্ঘদিন ধরেই খেলাপি ঋণ, দুর্বল তদারকি এবং অনিয়মের কারণে চাপের মধ্যে ছিল। বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে ফরেনসিক অডিটে দেখা গেছে ৯০ শতাংশেরও বেশি ঋণ খেলাপি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো একীভূতকরণ। এটি ব্যয়বহুল অবসায়ন প্রক্রিয়ার বিকল্প হিসেবেও কাজ করবে।

কোন ব্যাংকগুলো একীভূত হচ্ছে

সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী যেসব ব্যাংক একীভূত হচ্ছে:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক

এই ব্যাংকগুলো একীভূত হয়ে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামি ব্যাংকে রূপ নেবে। সরকার ইতিমধ্যেই ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন দিতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল ও আমানত রূপান্তরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। মোট প্রয়োজনীয় মূলধনের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্পষ্ট করেছেন যে, এই একীভূতকরণের ফলে কোনো কর্মী চাকরি হারাবেন না। বরং নতুন ব্যাংক গঠনের ফলে কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। আমানতকারীদের স্বার্থকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সম্প্রতি প্রণীত ব্যাংক রেজোল্যুশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ অনুযায়ী সরকার এই একীভূতকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ছয় সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা পরিকল্পনা ও তদারকির কাজ করবে। লক্ষ্য হলো আগামী দেড় মাসের মধ্যেই প্রক্রিয়ার বেশিরভাগ কাজ শেষ করা।

কেন এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ

১. আস্থা পুনর্গঠন: শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।

২. দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা: অবসায়ন প্রক্রিয়ার ব্যয় ও অনিশ্চয়তা এড়িয়ে একটি টেকসই সমাধান তৈরি করা।

৩. ব্যবস্থাপনাগত শৃঙ্খলা: দুর্বল তদারকি ও অনিয়ম ঠেকিয়ে শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠন করা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী মোট ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশ খেলাপি, যা এক বছরে ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণকে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এটি একটি বড় মাইলফলক। শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণের মাধ্যমে শুধু আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাই নয়, জনগণের আস্থা পুনর্গঠনেও বড় ভূমিকা রাখবে। সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ ও কার্যকর তদারকি থাকলে এই নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ইসলামি ব্যাংক ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

অন্যান্য পোস্টগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *