পূবালী ব্যাংক শাখাসমূহ জানেন কি ? বাংলাদেশের আর্থিক খাতে পূবালী ব্যাংকের অবদান অসামান্য। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি স্বাধীনতার পর জাতীয়করণ হয় এবং ১৯৮৩ সালে পুনরায় বেসরকারি হয়। আজ এটি দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, যার মোট সম্পদ ৪১০ বিলিয়ন টাকারও বেশি। পূবালী ব্যাংকের লক্ষ্য সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ভরযোগ্য আর্থিক সেবা প্রদান করা। এর অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেম, মোবাইল অ্যাপ এবং ডিজিটাল সার্ভিসগুলো গ্রাহকদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে।
এই ব্যাংকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে দক্ষ কর্মকর্তাদের দল এবং স্থানীয় অর্থনীতির সাথে গভীর যোগাযোগ। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ব্যাংকটি নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে ১ মিলিয়ন টাকা দান করে সামাজিক দায়িত্ব পালনের উদাহরণ স্থাপন করেছে। গ্রাহকরা যখন একটি ব্যাংক খোঁজেন, তখন তারা শুধু অ্যাকাউন্ট খোলাই নয়, নিরাপদ এবং দ্রুত সেবা চান। পূবালী ব্যাংক ঠিক তাই প্রদান করে – ঋণ, জমা, রেমিট্যান্স এবং ট্রেড ফাইন্যান্সের মাধ্যমে।
কিন্তু কীভাবে এই সেবাগুলো পাওয়া যায়? সর্বপ্রথম, আপনার নিকটতম শাখায় যান। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় এর উপস্থিতি রয়েছে, যা গ্রাহকদের সুবিধা বাড়ায়। এর ফলে গ্রামীণ এলাকার লোকেরাও ব্যাংকিং সুবিধা পান। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে এটি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পূবালী ব্যাংক শাখাসমূহ: বিভাগভিত্তিক সম্পূর্ণ তালিকা
পূবালী ব্যাংকের শাখাসমূহ বাংলাদেশের সাতটি প্রশাসনিক বিভাগে ছড়িয়ে আছে, যা মোট ৫০৪টি শাখা এবং ২৪৪টি সাব-ব্রাঞ্চ নিয়ে গঠিত। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের কারণে গ্রাহকরা যেকোনো জায়গা থেকে সেবা পেতে পারেন। নীচে বিভাগ অনুসারে শাখাগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হলো, যাতে আপনি সহজেই নিকটতম শাখা খুঁজে পান। প্রত্যেক শাখার ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং রাউটিং নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। (সম্পূর্ণ তালিকার জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।)
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি শাখা – মোট ৮০টি। এখানে শহুরে গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে, যেমন কর্পোরেট ব্যাংকিং। উদাহরণস্বরূপ:
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
মিরপুর | ১৩১, মিরপুর রোড, ঢাকা | ০২-৯০০০১২৩ | ১৭৫১২০৩৪৫ |
গুলশান | ১১৯, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা | ০২-৮৮৮১২৩৪ | ১৭৫১২০৬৭৮ |
উত্তরা | সেক্টর ৩, উত্তরা মডেল টাউন | ০২-৯১১২৩৪৫ | ১৭৫১২০৯৮৭ |
এছাড়া, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ অন্যান্য এলাকায় ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। এই বিভাগে ইসলামিক উইন্ডো সুবিধাও উপলব্ধ।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রামে ৬৫টি শাখা রয়েছে, যা বন্দর শহরের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে সমর্থন করে।
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
আগ্রাবাদ কর্পোরেট | ১৪/১, আগ্রাবাদ সি/এ, চট্টগ্রাম | ০৩১-৭১১২৩৪ | ২০৫২৬০২৩৪ |
পতেঙ্গা | পতেঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া | ০৩১-৬৮৮১২৩ | ২০৫২৬০৫৬৭ |
বর্তমানবাদী, ফেনী এবং নোয়াখালী জেলায়ও শাখা ছড়িয়ে আছে। এখানকার শাখাগুলো রেমিট্যান্স এবং এক্সপোর্ট লোনের জন্য বিখ্যাত।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহীতে ৪৫টি শাখা, যা কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
রাজশাহী | স্টেশন রোড, রাজশাহী | ০৭২১-৭৭১২৩৪ | ২৬৫২৬৪৫৬ |
নওগাঁ | নওগাঁ সদর রোড | ০৭১-৬৩৩১২৩ | ২৬৫২৬৪৮৯ |
বগুড়া, পাবনা এবং নাটোরে সাব-ব্রাঞ্চগুলো কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণ প্রোগ্রাম চালায়।
খুলনা বিভাগ
খুলনায় ৫৫টি শাখা, যা শিল্প এবং বাণিজ্যের কেন্দ্র।
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
খুলনা | ৩২, খুলনা শহরগেট | ০৪১-৭২২১২৩ | ২৬৫২৬৭৮৯ |
যশোর | যশোর সদর | ০৪২-৬৮১২৩৪ | ২৬৫২৬৭১২ |
মংলা বন্দরের কাছে শাখাগুলো ট্রেড ফাইন্যান্সে দক্ষ।
বরিশাল বিভাগ
বরিশালে ৩৫টি শাখা, যা নদীবক্ষ এলাকার গ্রাহকদের সেবা করে। উদাহরণ:
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
বরিশাল | ১৮, কে.বি. হেমায়েতউদ্দিন রোড | ০৪৩১-৬৩৩১২৩ | ১৯০২৬০২৩ |
ভোলা | মহাজন পট্টি, সদর রোড | ০৪৯২২-৫৬২৩৪ | ১৯০২৬০৫৬ |
বাবুগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জসহ এলাকায় সাব-ব্রাঞ্চ রয়েছে।
সিলেট বিভাগ
সিলেটে ৪০টি শাখা, চা বাগান এবং রেমিট্যান্সের জন্য উপযোগী।
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
সিলেট | ১০১, কে.এ.সি. বাজার | ০৮২১-৭১৫৬৭৮ | ৩০৫২৬৪৫৬ |
হবিগঞ্জ | হবিগঞ্জ সদর | ০৮৮২২-৪৫৬৭৮ | ৩০৫২৬৪৮৯ |
কুমিল্লা বিভাগ
কুমিল্লায় ৫০টি শাখা, যা শিল্পাঞ্চলকে সমর্থন করে।
শাখার নাম | ঠিকানা | ফোন | রাউটিং নম্বর |
---|---|---|---|
কুমিল্লা | ১২৩, কুমিল্লা সদর | ০৮১-৭২৬৫৪৩ | ১১০২৬০২৩ |
এছাড়া, বাগেরহাট (২টি), বান্দরবান (১টি), বরগুনা (২টি)সহ অন্যান্য জেলায় ছোট ছোট শাখা রয়েছে। মোট ৬৪টি জেলায় কভারেজ।
পূবালী ব্যাংকের সেবাসমূহ: গ্রাহককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
শাখাসমূহ ছাড়াও পূবালী ব্যাংকের সেবা বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে রয়েছে ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, লোন (হোম, বিজনেস, এসএমই), ক্রেডিট কার্ড এবং ইসলামিক ব্যাংকিং। ৩২টি ইসলামিক উইন্ডো রয়েছে, যেমন বরিশাল ইসলামিক উইন্ডো (শাখা কোড ৩৭৫)।
ডিজিটাল যুগে এর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ দিয়ে আপনি বাড়িতে বসে টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প (এসএসপি) ছাড়া কোনো চার্জ নেই, যা অভিভাবকদের জন্য আদর্শ। গ্রাহকরা প্রায়ই বলেন, “এই ব্যাংকের শাখায় গেলে সবকিছু দ্রুত হয়।” এর পেছনে রয়েছে প্রশিক্ষিত স্টাফ এবং আধুনিক প্রযুক্তি।
কিন্তু কীভাবে একটি শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলবেন? প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যান – জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ঠিকানার প্রমাণ। শাখার কর্মকর্তারা সাহায্য করবেন। এছাড়া, এটিএম বুথ এবং সিডিএমও প্রচুর, যেমন আদমপুর বাজার শাখায়।
ইতিহাস এবং অর্জন: বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তি
পূবালী ব্যাংকের ৬৫ বছরের ইতিহাসে অনেক মাইলফলক রয়েছে। ২০০৯ সালে নন-পারফর্মিং লোন ২.৯৬% এ নামিয়ে আনা একটি বড় সাফল্য। ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন টাকার পারপেচুয়াল বন্ড অনুমোদিত হয়েছে। ব্যাংকটি সামাজিক কাজেও সক্রিয় – শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখে।
এইসব অর্জনের ফলে গ্রাহকের বিশ্বাস বেড়েছে। একজন গ্রাহক বলেছেন, “পূবালী ব্যাংক আমার ব্যবসার সঙ্গী, কারণ এর শাখাগুলো সর্বত্র।” ভবিষ্যতে এটি আরও ডিজিটাল হয়ে উঠবে, যেমন ব্লকচেইন-ভিত্তিক সেবা।
গ্রাহকদের জন্য টিপস: সঠিক শাখা নির্বাচন
আপনি যদি নতুন গ্রাহক হন, তাহলে প্রথমে অফিসিয়াল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে শাখা খুঁজুন। রাউটিং নম্বর দিয়ে অনলাইন ট্রান্সফার সহজ। সুরক্ষার জন্য দ্বি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করুন। যদি সমস্যা হয়, হেল্পলাইন ১৬২৪৬-এ কল করুন।
পূবালী ব্যাংকের শাখাসমূহ শুধু অফিস নয়, এগুলো আপনার আর্থিক স্বপ্নের সঙ্গী। দেশের প্রত্যেক কোণায় এর উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। আজই নিকটতম শাখায় যান এবং সুবিধা নিন।