প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করতে চান? কিন্তু জানেন না কিভাবে অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হয়? তাহলে চিন্তা নেই কারণ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন” করার সঠিক নিয়ম জানানোর পাশাপাশি আপনাকে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাবো। সেহেতু আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন হলো এমন এক ধরনের লোন কার্যক্রম যা বিশেষ করে প্রবাসীদের প্রদান করা হয়। প্রবাসীদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর কর গড়ে তোলার জন্য এই লোনটি কাজ করে। তবে সময়ের সাথে সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রম ডিজিটাল ব্যাংকিং এ রূপান্তরিত হয়েছে। ধাপে ধাপে আমরা মূলত আমাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্ত নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন
বর্তমান সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে অনলাইনে লোন নেওয়ার কোন পদ্ধতি তৈরি করা হয়নি ও আনুষ্ঠানিক কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। সেহেতু আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে অবশ্যই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। তবে আপনার আবেদনটি ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার পর আপনি কিছু দিনের মধ্যে আপনার মোবাইলে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনার লোনটি অনুমোদিত হয়েছে। এবার তবে ধাপে ধাপে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি কি লোন দেয়
বর্তমান সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের সেবা পরিচালনা করছে গ্রাহকদের সুবিধার্থে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে ৪ ধরনের লোন প্রদান করছে গ্রাহকদের সুবিধার্থে। এই বিশেষ ৪ ধরনের লোনের মধ্যে রয়েছে:
- অভিবাসন ঋণ
- অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
- পুনর্বাসন ঋণ
- বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
উপরোক্ত ৪টি ঋণের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করছে। নিম্নে ৪টি লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আকারে আলোচনা করা হয়েছে:
অভিবাসন ঋণ
বৈধপথে বিদেশে যাওয়ার জন্য অবশ্যই বৈধ কাগজের পাশাপাশি অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থ মেটানোর জন্য জ প্রবাস যেতে ইচ্ছুক ও
এবং বৈধ ডকুমেন্টসদারী ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ(পরিবর্তনশীল) টাকা লোন নিতে পারবেন। গ্রাহকদের সুবিধার্থে অভিবাসন ঋণের সুদের হার মাএ ৯%।
অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি বৈধ ভিসা পাসপোর্ট এর মাধ্যমে বিদেশে থাকেন। সেক্ষেত্রে দেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অথবা সে দেশে ফিরলে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন অভিবাসী বৃহৎ ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা জামানত বিহীনভাবে ও জামানত দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করতে পারবেন ।
প্রবাসী গ্রাহক বিদেশে অবস্থানকালে প্রবাসী যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোমটি করতে চান এক্ষেত্রে পরিবারের যেকোনো সদস্য পিতা-মাতা , স্বামী স্ত্রী প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান) সহজ শর্তের লোনটি গ্রহণ করতে পারবেন।
পুনর্বাসন ঋণ
কোন বৈধ প্রবাসী যদি দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর যদি তিনি একবারে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি দেশে বৈধ কোনো প্রকল্প অর্থাৎ ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে চান। তবে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের মাধ্যমে পুনর্বাসন ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা ও জামানথ দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। তবে ঋণ পরিশোধ করার সময়কাল সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত পাওয়া যায়। পুনর্বাসন ঋণের সুদের হার মাত্র ৯ শতাংশ। তবে ঋণের সুদের হার পরিবর্তনশীল এক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা থেকে সুদের হার জেনে নিন।
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
২০২০ সালে করোনা মহামারীী পরবর্তী সময় থেকেই স্কিমটি চালু হয়। বিশেষ করে যে সকল প্রবাসীরা করোনার সময় দেশে ফিরে আসেন ও করোনা আক্রান্ত হন তাদের জন্য এই ঋণ সুবিধাটি রয়েছে। এই লোনের মাধ্যমে এই গ্রাহকেরা ৩বছরের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা জামানতবিহীনভাবে ও জামানত দিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা লোন গ্রহণ করতে পারেন। তবে গ্রুপ লোনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ৫ লক্ষ টাকা করে সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন বিশেষ পুনর্বাসন লোন স্কিম এর মাধ্যমে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে কি কি লাগে
বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই বিশেষ কিছু ডকুমেন্টস প্রদান করতে হয়। এ সকল কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করে মূলত ব্যাংক গ্রাহকদের লোন প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর ব্যতিক্রম নয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা নিম্ন উপস্থাপন করা হয়েছে:
- আবেদনকারীর গ্রাহকের জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- বিএমআইটি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- গ্রাহকের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার প্রামাণ্য দলিল ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কর্তৃক প্রধানকৃত নাগরিক সনদ।
- আবেদনকারী সদ্য তোলা ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে। অবশ্যই রঙিন ছবি হতে হবে।
- নূন্যতম ২জন জামিনদারের প্রয়োজন হবে এবং জামিনদারের ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার প্রামাণ্য দলিল প্রদান করতে হবে।
- জামিনদার এর যে কোন স্বাক্ষরকৃত তিনটি বৈধ ব্যাংক চেকের পাতা প্রদান করতে হবে।
- ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি প্রয়োজন হতে পারে বিশেষ ক্ষেত্রে। (পুনর্বাসন ও অভিবাসন লোনের ক্ষেত্রে)।
- প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ঠিকানা ও সর্বশেষ এক বছরের আয়-ব্যয় বিবরণী সম্বলিত প্রতিবেদন (পুনর্বাসন ও অভিবাসন লোন) প্রদান করতে হবে।
উপরোক্ত কাগজপত্র ছাড়া যদি অন্য কোন আরও ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের দায়িত্ব কর্মকর্তা এ বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনা পাওয়ার যোগ্যতা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনা পাওয়ার জন্য অবশ্যই উক্ত গ্রাহকের যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। গ্রাহক যদি যোগ্যতা সম্পন্ন হয় তাহলে তিনি লোন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে তার লোন অনুমোদিত হবে। নিম্নে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার যোগ্যতা উপস্থাপন করা হয়েছে সুবিন্যস্তভাবে:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই বৈধ বাংলাদেশী না করে কেউ হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স নূন্যতম বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নূন্যতম বয়স ২১ বছর প্রয়োজন হয়।
- আবেদনকারী যে শাখা থেকে লোন গ্রহণ করতে চাচ্ছেন অবশ্যই আবেদনকারীকে উক্ত শাখার বাসিন্দা হতে হবে স্থায়ীভাবে।
- পূর্বে কোন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ খেলাপি হয়েছে এমন গ্রাহক হওয়া চলবে না।
- আবেদনকারীর স্বপক্ষে কমপক্ষে ২ জন জামিনদার থাকতে হবে। জামিনদারদের অবশ্যই ঋণ পরিশোধে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে।
- অভিবাসন ঋণ পেতে আবেদনকারী বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- পুনর্বাসন লোন পাওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যবসা বা প্রকল্পের ঠিকানা ও উদ্দেশ্য সম্মিলিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
উপরোক্ত শর্ত সমূহ যদি আপনি পূরণ করেন সেক্ষেত্রে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পদ্ধতি
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা খুবই সহজ। লোন গ্রহণ করার জন্য গ্রাহককে যে সকল ধাপ অনুসরণ করতে হবে সে সকল ধাপ নিম্ন উপস্থাপন করা হয়েছে:
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করার জন্য জন্য প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস আপনি সংগ্রহ করুন। ডকুমেন্টস সংগ্রহ করার পরে আপনি আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় গিয়ে কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করুন আপনার চাহিদা অনুযায়ী লোনের জন্য।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের দায়িত্ব কর্মকর্তা আপনার সাথে আলোচনা করে আপনাকে লোনের আবেদন পত্র প্রদান করবেন।
- আবেদন পত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করার পর আবেদন পএের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করুন।
- পূরণকত আবেদন পএ ও আপনার সকল ডকুমেন্টস এর দ্বারা যাচাই-বাছাই করে দ্রুত আপনার লোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হলে দ্রুত অনুমোদন করবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
- লোনটি অনুমোদিত হলে আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুদেবার্তা বা কলের মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনার লোনটি অনুমোদিত হয়েছে।
- আপনার লোনটি অনুমোদিত হলে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোণ এর অর্থ এককালীন বা ধীরে ধীরে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সতর্কতা
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা লোনের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন না। তবে তারা লোন নিতে চান এক্ষেত্রে তারা সতর্ক হোন কারণ আপনাকে লোনের অর্থ সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে লোন গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী লোন আবেদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। একটি সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ লোন সুবিধা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের যে সকল সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সহজ শর্তে দ্রুত লোন প্রদান করে থাকে।
- বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কম সুদের হার গ্রহণ করে থাকে।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে জমানতবিহীন ঋণ সেবা পাওয়া যায় । তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের জমা দেওয়ার যুক্ত করলে বড় অঙ্কের ঋণ সেবা গ্রহণ করা যায়।
- লোনের অর্থ পরিশোধ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় ফলে আর্থিক সচ্ছলতা বজায় থাকে।
আরও জানতে পারেনঃ অনলাইনে ব্যাংক লোন আবেদন ২০২৫
শেষ কথা
প্রত্যাশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন অনলাইন আবেদন সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছি। আপনি যদি দেশ থেকে বিদেশে যেতে চান প্রবাসী হিসেবে অথবা প্রবাস থেকে দেশে এসে ব্যবসা করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য সেরা একটি ব্যাংক লোন হতে পারে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন। তবে এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আপনার নিকটস্থ শাখায় গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।